অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ ফুল হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমবেশি সবার সাথেই হয়ে থাকে। বিশেষ করে ১২৮জিবির কম স্টোরেজের এন্ড্রয়েড ফোন হলে তো বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় ফোনের স্পেস নিয়ে। বর্তমানে অ্যাপ ও হাই গ্রাফিক্স গেমসমুহ স্টোরেজ দ্রুত ফুল হয়ে যাওয়ার কারণ বলা চলে।
বেশিরভাগ ফোনে কম স্টোরেজ খালি থাকলে ফোনের সাধারণ পারফরম্যান্স অপেক্ষাকৃত স্লো হয়ে যায়। এছাড়াও এন্ড্রয়েডে “Internal Storage Running Out” এর মত বিরক্তিকর নোটিফিকেশন কারোই পছন্দের না। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এন্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ খালি করবেন।
অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে ফোনের স্টোরেজ খালি করার উপায় প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে দেওয়া রয়েছে। “ফ্রি আপ স্পেস” নামের এই ফিচারটি ব্যবহার করে বেশ সহজে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ খালি করা যায়।
“ফ্রি আপ স্পেস” ফিচারটি ব্যবহার করতে প্রথমে ফোনের সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করুন। অধিকাংশ ফোনে সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করে নিচে স্ক্রল করলে “Storage” অপশনটি দেখতে পাবেন, সেটিতে প্রবেশ করুন। তবে শাওমির ফোনগুলোতে About Phone ও এরপর Storage এ প্রবেশ করতে হবে।
এরপর স্টোরেজ খালি করতে Free Up / Free Up Storage লেখায় ট্যাপ করে পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করুন। এছাড়াও Storage মেন্যু ব্যবহার করে আরো স্পেস খালি করতে পারবেন। ফোনের বেশিরভাগ স্পেস দখল করে অ্যাপ ও গেমসমুহ।
ফোনের কোন অ্যাপ ও গেম কতটা স্টোরেজ দখল করে আছে, তা জানতে Storage এ প্রবেশ করার পর Apps এ ট্যাপ করুন। এরপর কোন অ্যাপ ফোনের স্টোরেজ কতটা ব্যবহার করছে, তার তথ্য দেখতে পাবেন।
যেসব অ্যাপ নিয়মিত ব্যবহার করা হয় না, সেগুলো ফোন থেকে ডিলিট করে দেওয়াই উত্তম। যেহেতু দ্রুতগতির ইন্টারনেট এর সুবাদে বর্তমানে যেকোনো অ্যাপ বা গেম তাড়াতাড়ি ডাউনলোড করা যায়, তাই স্টোরেজ সাশ্রয় করতে মাঝেমধ্যে ব্যবহৃত হয় এমন অ্যাপও আনইন্সটল করতে পারেন।
ফোনের অ্যাপসমুহ রান করার সময় বিভিন্ন ফাইল ব্যবহৃত হয়। কিছু ফাইল কিছু সময় পর আর কোনো কাজে লাগেনা। তবে অ্যাপ ডাউনলোড করার পর যতদিন ব্যবহার করা হয়েছে, প্রতিদিন কিছু নতুন ডাটা অ্যাপটিতে জমা হয়ে থাকে।
ধরুন আপনি মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া প্রবেশ করলেও আপনার মেসেজসমুহ দেখতে পারবেন। এর কারণ হলো আপনি চ্যাট করার সময় চ্যাটের ডাটা ফোনের স্টোরেজে সেভ হয়ে যায়। আর এই ডাটা বা ক্যাশ ফোনের স্টোরেজের অনেকটা স্পেস নেয়।
ফোনে থাকা অ্যাপের ডাটা (Data) কিছু ক্ষেত্রে দরকারি হলেও ক্যাশ (Cache) ছাড়াও অ্যাপগুলো চলতে পারে। তাই চাইলে অ্যাপের ক্যাশ ক্লিয়ার করে দিয়ে কিছু স্টোরেজ খালি করা যায়। অ্যাপের ক্যাশ ক্লিয়ার করতে প্রথমে Settings অ্যাপে প্রবেশ করুন।
এরপর Apps সেকশনে প্রবেশ করুন। কিছু ফোনে এই সেকশনেই অ্যাপের লিস্ট পেয়ে যাবেন। শাওমি ফোনের ক্ষেত্রে Manage Apps এ ট্যাপ করে অ্যাপ স্ক্রিনে প্রবেশ করুন। এরপর প্রতিটি অ্যাপের তালিকা দেখতে পাবেন।
অ্যাপে ট্যাপ করলে অ্যাপ কতটা স্পেস দখল করেছে, অ্যাপের ডাটা ও ক্যাশ কতটুকু স্পেস দখল করেছে; তা জানতে পারবেন। এরপর Force Stop / Uninstall / Clear Data / Clear Cache এসব অপশন দেখতে পাবেন।
অ্যাপের ডাটা ক্লিয়ার করতে Clear Data তে ট্যাপ করুন। অ্যাপের ক্যাশ ক্লিয়ার করতে Clear Cache তে ট্যাপ করুন। কিছু ফোনের ক্যাশ ক্লিয়ার করার অপশন Clear Data অপশনে ট্যাপ করার পর দেখতে পাবেন।
উল্লেখ্য যে ক্যাশ ক্লিয়ার করলে ফোনে থাকা অ্যাপের কোনো পরিবর্তন হয়না। কিন্তু ডাটা ক্লিয়ার করলে অ্যাপের সকল ডাটা রিসেট হয়ে যাবে, যা অনেকটা অ্যাপ নতুন ইন্সটল করলে যেমন হয় তেমনটা দেখাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ওই অ্যাপে আবার নতুন করে লগিন করতে হবে। তাই অপশনসমুহের মধ্যে যেটি আপনার জন্য ভালো হয়, সেটি সিলেক্ট করুন।
ইন্টারনেট এর সহজলভ্যতার কারণে ক্লাউড স্টোরেজে ফাইল জমা রাখা একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে। ছবি ও ভিডিও ক্লাউড স্টোরেজে জমা রাখার মাধ্যমে ফোনের স্টোরেজ অনেকটা খালি রাখা সম্ভব। বিনামূল্যে অনলাইনে ফাইল জমা রাখার একাধিক মাধ্যম রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুগল ড্রাইভ।
এছাড়া শুধুমাত্র ফটো ও ভিডিও রাখার জন্যও গুগল ফটোস নামের আলাদা একটি অ্যাপ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গুগল ফটোস অ্যাপ ব্যবহার করে কিভাবে অনলাইন ছবি জমা রাখবেন। গুগল ফটোস এ রাখা ছবি গুগল একাউন্টে জমা থাকে। এই অ্যাপটি আপনার ফোনে আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকতে পারে। এছাড়া প্লে স্টোর থেকেও গুগল ফটোস ডাউনলোড করতে পারেন। গুগল ফটোসে ছবি জমা রাখতেঃ
আপনার গুগল একাউন্টের স্টোরেজ কতটুকু খালি আছে ও পূর্ণ হয়েছে, তাও খেয়াল রাখুন। এছাড়াও মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ব্যাকাপ নেওয়া ফটোর কোয়ালিটি ও সিলেক্ট করা যাবে। আপনার ফোনে একাধিক গুগল একাউন্ট থাকলে, কোন একাউন্টে ছবি ব্যাকাপ রাখছেন তা খেয়াল রাখুন।
ব্যাকাপ সম্পন্ন হলে ব্যাকাপ নেওয়া ছবি ও ভিডিও ফোন থেকে ডিলিট করে দিতে পারেন। ইতিমধ্যে ফটোস অ্যাপের হোমে স্টোরেজ ফ্রি খালি করার নোটিশ হয়ত পেয়ে যাবেন। যদি এমন কোনো নোটিশ না দেখেন সেক্ষেত্রে ব্যাকাপ নেওয়া ছবি ডিলেট করতেঃ
বর্তমানে বেশিরভাগ ফোনে এসডি কার্ড বা মেমোরি কার্ড স্লট দেখা যায়। বিশেষ করে বাজেট ফোনগুলোতে ইন্টারনাল স্টোরেজ কম থাকায় এসডি কার্ড স্লট একটি অত্যাবশ্যকীয় ফিচার। উল্লিখিত কোনো উপায়ে যদি আপনার ফোনের স্টোরেজ খালি করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে এসডি কার্ড বা মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
বাজারে প্রায় যেকোনো বাজেট রেঞ্জে পাওয়া যায় এসডি কার্ড বা মেমোরি কার্ড। তবে এসডি কার্ড কেনার আগে অবশ্যই ওয়ারেন্টি নিশ্চিত করে ক্রয় করুন। এছাড়াও অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের এসডি কার্ড নির্বাচন করুন। এসডি কার্ড এর রাইটিং রিডিং স্পিড স্লো হলে অনেকসময় ফোন স্লো হয়ে যায়।
ছবি, ভিডিও, গান, ইত্যাদি ফোনের স্টোরেজ থেকে এসডি কার্ডে মুভ করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্টোরেজ খালি করতে পারেন। এছাড়াও অনেক ফোনে এসডি কার্ডে অ্যাপ মুভ করার ফিচার রয়েছে, চাইলে এই ফিচারটি ব্যবহার করে ফোনের স্টোরেজ খালি করতে পারেন।