তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট যেমন সকলের নিত্য কাজের সহায়ক ঠিক তেমনিই সাইবার স্ক্যাম বা অনলাইন প্রতারণা সকলেরই ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। অনলাইনে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার প্রতারকরা। বিভিন্ন রকমের প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ঠিক যেমনটা সম্প্রতি নাগপুরের এক মহিলার সঙ্গে ঘটেছে। অনলাইনে প্রতারণার স্বীকার হয়ে কয়েক মুহূর্তেই ১.১৩ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি।
অনলাইনে মোটা বেতনের চাকরির অফার কিংবা লটারিতে জয়, এই জাতীয় প্রলোভন আমরা প্রায়শই দেখে থাকি। কিন্তু এই ধরনের চাকরি বা লটারি যে বাস্তবে পাওয়া যায় না, তাও আমরা জানি। কিন্তু এর পরও লোভে পড়ে সেই চাকরির খোঁজেই নিজেদের সঞ্চয় হারিয়ে ফেলি। নাগপুরের সেই মহিলাও অনলাইন চাকরির এই লোভনীয় অফারে বেমালুম ঠকেছেন। ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মহিলার বয়স ২৩ বছর। ওই মহিলাকে অনলাইনেই বিশাল বেতনের একটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গত ৪ ডিসেম্বর অপরিচিত একজন তার ফোনে একটি বার্তা পাঠায়। আর সেই বার্তা প্রেরক নিজেকে একটি ই-কমার্স ফার্মের প্রজেক্ট ম্যানেজার বলে দাবি করেন। মহিলাকে অনলাইনে প্রতিদিন ৫০০০ টাকার কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই মেসেজের ভিতরেই ছিল একটি লিঙ্ক। ম্যালিশিয়াস লিঙ্কের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। লিঙ্কে ক্লিক করলে একটি অনলাইন পেজ খুলে যায় এবং সেখানেই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
ওই মহিলাকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কিছু টাকাও খরচ করতে হয়েছিল। টাকা দেওয়ার পরেই তিনি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার একটি বিল চেয়ে নিয়েছিলেন। বিলটি পেয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে টাকার চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। নানা অজুহাতে ওই মহিলার কাছ থেকে মোট ১.১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। আর যখন তিনি বুঝতে পারেন যে এমন কোনও চাকরি আদৌ নেই, তিনি অনলাইন প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন – ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
এরপরই তিনি সোজা পুলিশের কাছে যান। পুরো বিষয়টি বিশদে জানিয়ে তার পরে আইপিসি ৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। প্রমাণ হিসেবে সেই রেজিস্ট্রেশনের বিল এবং ট্রান্জাকশনের সব তথ্য পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দোষীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চালানো হচ্ছে।
তাই চলুন জেনে নিই প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এরূপ অনলাইন স্ক্যাম বা অনলাইনে প্রতারণা থেকে বাঁচার কিছু উপায়-
১) অপরিচিত কোনো ব্যাক্তির পাঠানো মেসেজ বা বার্তায় যদি কোনো লিঙ্ক থাকে, তাতে ক্লিক করবেন না। আপনার বন্ধু এবং পরিবারের কাছ থেকে আসা লিঙ্ক নিয়েও যথেষ্ট সতর্ক থাকুন।
২) আপনি যদি মনে করেন যে, বার্তায় থাকা লিঙ্কটি একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট, ই-কমার্স সাইট বা ব্যাংক ওয়েবসাইট থেকে এসেছে, সে ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বেশিরভাগ সময়ই ভুয়া নামে লিঙ্ক তৈরি করা হয়।
৩) “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু” কথাটি স্মরণ রাখবেন। লোভের বশবর্তী হয়ে এই ধরনের ভুয়া চাকরির প্রতিশ্রুতিতে কখনোই বিশ্বাস করবেন না। বিশেষ করে যখন এই বিপুল পরিমাণ বেতনের কথা বলা হয়।
৪) হুট করেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোনো অনলাইন পেমেন্ট করবেন না। এর জন্য সর্বদা প্রথমে কোম্পানির URL চেক করুন। URL-এ https:// লেখা আছে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখুন। একমাত্র এর দ্বারাই আপনি সিকিওর কানেকশন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।
৫) সবসময় ওয়েবসাইটের বানানটি ভালো করে দেখে নিন। কারণ জাল ওয়েবসাইটে সাধারণত ভুল বানান ব্যবহৃত হয়।