অবশেষে বাংলাদেশের বাজারে চলে এলো রেডমি নোট ১১ সিরিজের প্রথম ফোন, রেডমি নোট ১১। একটি লাইভস্ট্রিম এর মাধ্যমে রেডমি নোট ১১ ফোনটি দেশের বাজারে নিয়ে আসে শাওমি। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি রেডমি নোট সিরিজের প্রথম স্মার্টফোন। চলুন জেনে নেওয়া যাক রেডমি নোট ১১ এর দাম ও স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে ।
গতবছরের রেডমি নোট ১০ সিরিজে আমরা কিছুটা নতুনত্ব দেখেছিলাম। তবে রেডমি নোট ১১ ফোনটি যেহেতু বাজেট ফোন, তাই এর দাম বিবেচনায় বিল্ড ও ডিজাইন মানানসই বলা চলে। ফোনের সামনে পাঞ্চ-হোল ডিসপ্লেতে রীতিমত শোভা পেয়েছে সেলফি ক্যামেরা। মাত্র ১৭৯গ্রাম ওজনের এই ফোনটির স্ক্রিনে কোনো ধরণের কার্পণ্য চোখে পড়বে না। ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট এর ৬.৪৩ইঞ্চির অ্যামোলেড স্ক্রিন, ফোনটির দাম বিবেচনায় অসাধারণ বলা চলে।
এই দামে মেইনস্ট্রিম একটি ব্র্যান্ড অ্যামোলেড ডিসপ্লে আনার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা আরো বাড়িয়ে দিলো অন্যান্য ফোন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য। তবে শাওমির এমন পদক্ষেপ এর জন্য দিনশেষে লাভবান হবেন সাধারণ ক্রেতাগণ। আবার ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট, তাও নোট সিরিজের বেইস ভ্যারিয়েন্টে বেশ অসাধারণ একটি সংযোজন বলা যেতে পারে।
শাওমি রেডমি নোট ১১ ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে কোয়ালকম এর স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর। এই প্রসেসর আমরা সম্প্রতি অপো এ৭৬ ফোনটিতে দেখতে পেয়েছি। অপো এ৭৬ এর দাম ও ফিচার ও প্রায় শাওমি নোট ১১ এর কাছাকাছি। তবে অপো এ৭৬ ফোনে এলসিডি স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। আবার শাওমির রেডমি নোট ১১ দামের দিক দিয়েও ক্রেতাদের জন্য দারুণ কিছু অপশন রাখছে। দেশের বাজারে প্রতিটি ব্র্যান্ড বেশ ভাল প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলা যেতে পারে।
রেডমি নোট ১১ পাওয়া যাবে ৪/৬৪জিবি, ৪/১২৮জিবি ও ৬/১২৮জিবি এই তিনটি ভ্যারিয়েন্টে। এছাড়া মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে ফোনটির স্টোরেজ বাড়িয়ে নেওয়া সুযোগও রয়েছে।
যারা ভাবছেন কেমন হতে পারে এই স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর, তাদের সুবিধার্থে বলে রাখি এই প্রসেসর এর পারফরম্যান্স মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৮ এর মতো। তবে অধিক সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই প্রসেসর ভালো সার্ভিস দিতে পারবে বলে ধারণা করা যায়।
রেডমি নোট ১১ এ কোনো ধরনের ৫জি সাপোর্ট থাকছে না। হয়ত নোট ১১ প্রো সিরিজে আমরা ৫জি এর সুবিধা দেখতে পাবো। ফোনটিতে সাইড মাউন্টেড ফিংগারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
রেডমি নোট ১১ ফোনটির ব্যাকে রয়েছে কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ। এর চারটি ক্যামেরার আসলে কার্যকরী দুইটি ক্যামেরা, আর বাকি দুইটি হলো ২মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো ক্যামেরা ও ডেপথ সেন্সর। ফোনটির মূল ক্যামেরায় ৫০মেগাপিক্সেলের সেন্সর পাশাপাশি একটি ৮মেগাপিক্সেলের আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ও রয়েছে।
ফোনটির ফ্রন্টে রয়েছে ১৩মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। রেডমি নোট ১১ এর ক্যামেরা ফিচার কিছুটা দুর্বল বলা চলে। ফোনটিতে কোনো ক্যামেরা দ্বারাই ১০৮০পি ৩০এফপিএস এর বেশি কোয়ালিটিতে ভিডিও রেকর্ড করা যায়না। অবশ্য দাম বিবেচনায় এই ক্যামেরাকে চলনসই বলা চলে।
ফোনটির নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী অপো এ৭৬ ও অবশ্য এর থেকে বেশি দাম নিয়েও ৪কে ভিডিও রেকর্ডের সুযোগ দিচ্ছে না।
শাওমি ফোনসমূহ ব্যাটারি ডিপার্টমেন্টে বরাবরই বাজিমাত করে এসেছে। রেডমি নোট ১১ এর ক্ষেত্রেও এর কোনো ব্যতিক্রম থাকছে না।
রেডমি নোট ১১ ফোনটিতে ৫০০০মিলিএম্প বিশাল ব্যাটারি রয়েছে, যা চার্জ করতে ফোনের বক্সে পেয়ে যাবেন ৩৩ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার। যেকোনো সাধারণ ব্যবহারকারী এই ফোন থেকে অন্তত ১০ঘন্টা একটানা ব্যাকাপ পাবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।
আবার মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে ফোনটি অর্ধেকের বেশি চার্জ হয়ে যায়। ব্যাটারি যদি হয় আপনার ফোন কেনার অন্যতম কারণ, তবে রেডমি নোট ১১ আপনাকে হতাশ করবে না।
অ্যান্ড্রয়েড ১১ ভিত্তিক নতুন মিইউআই ১৩ এর দেখা মিলবে রেডমি নোট ১১ ফোনটিতে। বরাবরের মত কাস্টমাইজেশনের অসংখ্য ফিচার পেয়ে যাবেন এই কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড স্কিনে। তবে ভারি সফটওয়্যার এর পরিবর্তে মিনিমাল ও সাধারণ ইউআই যারা পছন্দ করেন, মিইউআই তাদের কাছে কেমন লাগবে সেটা সময়ই বলে দেবে।
রেডমি নোট ১১ এর বেস ভ্যারিয়েন্ট (৪/৬৪) পাওয়া যাবে মাত্র ১৬,৪৯৯টাকায়। গত বছরের রেডমি নোট ১০ এর দাম তুলনা করলে এই ফোনের দাম অনেক কম বলা চলে। ৪জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজের রেডমি নোট ১১ এর দাম ১৭,৪৯৯টাকা। সবচেয়ে দামি ভ্যারিয়েন্টে থাকছে ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজ, যা পাওয়া যাবে ১৮,৯৯৯টাকায়।