মুক্তি পেলো ওয়ালটন এর নতুন ফোন, ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি। দেশের স্মার্টফোন মার্কেটে প্রতিযোগিতা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। স্যামসাং, শাওমি ও রিয়েলমি এর মত বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনও পিছিয়ে নেই কোনোদিকে। তারই প্রমাণ হিসেবে এবার বাজিমাত করার মত একটি ডিভাইস নিয়ে এলো ওয়ালটন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সদ্য মুক্তি পাওয়া ওয়ালটন এর নতুন ফোন ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি এর দাম ও স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত।
ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি এর ডিজাইন এর ক্ষেত্রে “সিম্পল এর মধ্যে গর্জিয়াস” কথাটি সম্পূর্ণভাবে খাটে। এই ফোনটির ডিজাইন দেখতে বেশ সাধারণ হলেও এর মিনিমালিস্টিক লুক দেখে ফোনটির দাম বিবেচনার কোনো উপায় নেই। বেশ সুন্দর দেখতে একটি ফ্রন্ট পাঞ্চ-হোল ক্যামেরা, ফোনটির ব্যাকে বেশ সুন্দরভাবে স্থান পেয়েছে ক্যামেরা কাটআউট। ক্যামেরার ঠিক কিছুটা নিচেই রয়েছে ফিজিক্যাল ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর।
ফোনের ফ্রন্টে রয়েছে ৬.৫৩ইঞ্চি ফুল এইচডি প্লাস রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লে। এই দামে কিছু ব্রান্ডের ফোন এইচডি প্লাস ডিসপ্লেতে ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট প্রদান করছে। তবে ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট এর চেয়ে বেটার স্ক্রিন রেজ্যুলেশন অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অর্থাৎ এখানে গিমিক কোনো ফিচার না রেখে কাজের ফিচার রাখার চেষ্টা করেছে ওয়ালটন।
ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর স্ন্যাপড্রাগন ৬৬৫ প্রসেসর। প্রসেসরটি বেশ পুরোনো হলেও বর্তমানে বেশ ভাল পারফরম্যান্স প্রদানে সক্ষম। আর এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ওয়ালটন বাজারে নিয়ে আসলো কোয়ালকম এর স্ন্যাপড্রাগ ৬৬৫ প্রসেসর এর ফোন ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি।
এখন প্রশ্ন হলো পুরোনো এই চিপসেট কতটুকুই বা শক্তিশালী? মূলত এই ফোনে থাকা স্ন্যাপড্রাগন ৬৬৫ এখনো সম্পূর্ণ কার্যকর। এই প্রসেসরটি একই দামের অন্যান্য ফোনে থাকা হেলিও জি৮০ বা হেলিও জি৮৮ প্রসেসরের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আবার যেহেতু স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরে লম্বা সময় ধরে পারফরম্যান্স ভালো থাকে, তাই দীর্ঘদিন ব্যবহারে ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি এর স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর অধিক ভালো পারফরম্যান্স বজায় রাখবে।
এছাড়াও এই ফোনে রয়েছে ডজন খানেক বাড়তি ফিচার, যেমনঃ নয়েজ ক্যান্সেলেশন মাইক, এনহেন্সড প্রাইভেসি ইন্ডিকেটরস, স্ক্রিন রেকর্ডার, ডার্ক মোড, জেশ্চার ন্যাভিগেশন, প্রেয়ার টাইমস, ইত্যাদি। রয়েছে ওয়াইডভাইন এল১ সাপোর্ট যার ফলে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিম করা যাবে এইচডি কোয়ালিটিতে।
৪জিবি র্যাম ও ৬৪জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে ফোনটি। এই ফোনের স্টোরেজ টাইপ হলো ইউএফএস, যা সাধারণ ইএমএমসি স্টোরেজ থেকে অনেক ফাস্ট। আবার ফোনটির সফটওয়্যার হিসেবে থাকছে অ্যান্ড্রয়েড ১১ ভিত্তিক ভি স্মার্ট ওএস, যা মূলত লাইটওয়েট একটি কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড স্কিন এবং অসংখ্য ফিচারে ভর্তি।
ক্যামেরা সেকশনে ওয়ালটন দিনে দিনে বেশ উন্নতি করছে। ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটির ব্যাকে রয়েছে কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ ও ফ্রন্টে রয়েছে ১৩মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। ১৬মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরার পাশাপাশি ৮মেগাপিক্সেল এর আলট্রাওয়াইড, এবং ২মেগাপিক্সেল এর একটি ডেপথ সেন্সর ও আরেকটি ২এমপি ম্যাক্রো ক্যামেরা রয়েছে।
ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি এর ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন শুনে ফোনটিকে সাধারণ মনে করলে ভুল করবেন। কেননা অন্য সব ক্যামেরা ফিচার এর পাশাপাশি এই ফোনটিতে রয়েছে ফ্রন্ট ও ব্যাক, উভয় ক্যামেরা দ্বারা ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং এর সুযোগ। এই দামে তো কেনো, এর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ বাজেটের ফোনেও ফ্রন্ট ক্যামেরায় ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা পাওয়া যায়না। বাজেট ফোনে অসাধারণ এই ফিচার যুক্ত করায় ওয়ালটন সত্যিই প্রশংসনীয়।
ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটিতে থাকছে ৫০০০মিলি এম্পিয়ার এর লিথিয়াম ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারিকে চার্জ করতে ফোনের বক্সেই পেয়ে যাবেন ১৮ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার।
ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটির দাম ১৩,৯৯৯টাকা। তবে প্রি-বুক করলে ফোনটি পাওয়া যাবে ১২,৪৯৯টাকায়। এপ্রিল মাসের ২৪তারিখ পর্যন্ত ওয়ালটন প্লাস, ওয়ালটন ব্র্যান্ড ও রিটেইল আউটলেট এবং ওয়ালকার্ট থেকে ফোনটি প্রি-বুক করা যাবে। (আপাতত শুধু ৪জিবি র্যাম ভ্যারিয়েশনের দাম জানা গেছে।)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রায় ১৪হাজার টাকা প্রাইস ট্যাগে এই ফোনটি কেনা কতটা যুক্তিযুক্ত। বাজারে এই দামে অসংখ্য ফোন পাওয়া গেলেও আমরা একে অফিসিয়াল রিয়েলমি ৫আই এর সাথে তুলনা করতে পারি। ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি দামে এক হাজার টাকা বেশি হওয়ায় ফোনটিতে থাকছে বাড়তি সুবিধা।
যেমনঃ রিয়েলমি ৫আই ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েড ১০ রয়েছে, যেখানে ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটি অফার করছে আউট অফ দ্যা বক্স অ্যান্ড্রয়েড ১১। আবার রিয়েলমি ৫আই এর এইচডি+ ডিসপ্লের স্থলে ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনিতে থাকছে ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে। এছাড়া ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি এর স্টোরেজ টাইপ ইউএফএস হওয়ায় এর থেকে বেটার পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। আবার রয়েছে ১৮ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার, যা রিয়েলমি ৫আই ফোনটিতে নেই।
সকল দিক বিবেচনা করলে ১৪হাজার টাকায় বাজারের অন্যান্য অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের চেয়ে ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে। অর্থাৎ আপনি যদি ১৪হাজার টাকার মধ্যে একটি ভালো মোবাইল এর খোঁজে থাকেন, তবে ওয়ালটন প্রিমো এস৮ মিনি ফোনটি দেখতে পারেন।