ক্রেডিট কার্ড বর্তমানে আমাদের জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলেও কিছু সাধারণ ভুল আমাদের সবারি হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করা উচিত নয় এমন কিছু কাজ সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো।
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা সম্ভব। তার পরেও এই অভ্যাস পরিহার করা উচিত। এটিএম বুথে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুললে ঐ টাকার উপর অনেক বেশি সুদ দিতে হয়। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দোকানে কেনাকাটা করার সময় পজ মেশিনের মাধ্যমে বা ডিজিটাল উপায়ে যে লেনদেন হয় সেক্ষেত্রে এরকম সুদ দিতে হয়না। (তবে সময়মত বিল পরিশোধ না করলে জরিমানা ও সুদ প্রযোজ্য হবে)।
এই ভুল কমবেশি সকল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী করে থাকেন। কখনো ক্রেডিট কার্ডের তথ্য অজানা, র্যান্ডম বা বিশ্বস্ত নয় এমন সাইটে প্রদান করতে যাবেন না। এতে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি বা হ্যাক হওয়ার মাধ্যমে আপনার মূল্যবান অর্থ হারাতে পারেন। তাই শুধুমাত্র জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত এমন ওয়েবসাইটে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন।
ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় অপব্যবহার হয়ে থাকে বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসে ফ্রি ট্র্যায়াল। হ্যাঁ, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদান করে হয়ত কিছুদিন বিনামূল্যে কাংখিত সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এভাবে অজানা ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি সেবা পেতে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদান করে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। ইউটিউব টিভি, স্পটিফাই, ইত্যাদি বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ট্রায়াল পেতে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদান করতে পারেন, কিন্তু বাজারে নতুন আসা কোনো ভিপিএন অ্যাপের ট্রায়াল সার্ভিস পেতে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য না দেওয়াই ভালো।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার নিয়ে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো কার্ডে টাকা জমা রাখার ফলে ক্রেডিট স্কোর বাড়ে। অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়টি বিশ্বাস করলেও বাস্তবে এই বিষয়টি ভিত্তিহীন। ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তাকা খরচ করা হলো একমাত্র উপায়। এমনকি কার্ডে জমার পরিমাণের কারণে আপনার ফি বেড়ে যেতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে মিনিমাম বা কম অংকের পেমেন্টে কোনো সমস্যা নেই, তবে এই বিষয়টি এড়িয়ে চলতে পারা উত্তম। আপনার বিল আগেভাগে পে করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঝণমুক্ত হয়ে যেতে পারবেন। আবার সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে ঠিক সময়ে সম্ভব হলে পেমেন্ট করে ফেললে পরে ঝামেলায় পড়তে হয়না।
দেরিতে পেমেন্ট করা বা পেমেন্ট সম্পুর্নভাবে মিস করা গুরুতরভাবে ক্রেডিট স্কোর খারাপ করতে পারে। ৩০দিনের মধ্যে মিস করা পেমেন্ট করতে ব্যার্থ হলে ১৭ থেকে ৮৩ পর্যন্ত কমে যেতে পারে আপনার ক্রেডিট স্কোর। তাই কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পেমেন্ট বকেয়া থাকার ঝুঁকি এড়াতে অটো পেমেন্ট সেট করে রাখতে পারেন।
অসংখ্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীগণ তাদের ক্রেডিট কার্ডের বিলিং স্টেটমেন্ট চেক করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর উচিত প্রতি মাসে অন্তত একবার, সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে একবার বিলিং স্টেটমেন্ট চেক করা। বিলিং স্টেটমেন্ট রেগুলার চেক করার মাধ্যমে আপনার কার্ডে সমস্যাসমূহের পাশাপাশি কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার হলে তার আভাস পেয়ে যাবেন।
কখনো আপনার কার্ডের তথ্য বা কার্ড অন্য কাউকে প্রদান করবেন না। উক্ত ব্যক্তি যে ই হোক না কেনো, কখনো আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে যাবেন না। কাউকে টাকা পাঠাতে হলে তাকে কার্ড প্রদান না করে তার একাউন্টে টাকা পাঠান, কিন্তু কখনো কার্ড অন্যের হাতে দিবেন না। দোকানে পেমেন্ট করার সময় পজ অপারেটরের হাতে কার্ড দিলেও কার্ডটি নিয়ে সে আপনার দৃষ্টির বাইরে যাতে না যায় সেই খেয়াল রাখবেন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে কিন্তু অনেক রকমের ফি রয়েছে যা সম্পর্কে জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে অনেক কাস্টমার এই বিষয়টিকে এড়িয়ে চলেন যা ঠিক নয়। আপনি যে ক্রেডিট কার্ডটি নিয়েছেন তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার দায়িত্ব। তাই কার্ড নেওয়ার আগে অবশ্যই উক্ত কার্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন।
কার্ডে থাকা সকল ক্রেডিট ব্যবহার করে ফেলা কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অযথা ক্রেডিট লিমিট শেষ করে ফেললে অনেক জরুরি দরকারেও আপনি কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই আপনি কি পরিমাণ ক্রেডিট খরচ করছেন অবশ্যই তার হিসাব রাখবেন। সবসময় খরচ মাসিক লিমিটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। আপনার যদি প্রয়োজন হয় তবে কার্ড প্রোভাইডারকে ক্রেডিট বাড়াতে বলতে পারেন।
নতুন ক্রেডিট কার্ডের জন্য এপ্লাই করার পর ক্রেডিট রিপোর্ট এর উপর নতুন ইনকোয়ারি হয়। আপনার ক্রেডিট বা কার্ড গ্রহণের তালিকা বড় হলে সময় বেশি লাগতে পারে এই প্রক্রিয়ায়। তাই চেষ্টা করুন খুব বেশি দরকার না হলে নতুন কার্ড এর জন্য আবেদন এড়িয়ে চলতে। এতে করে আপনার আলাদা আলাদা কার্ডের জন্য আলাদা করে বার্ষিক চার্জ দেওয়ার চাপও কমবে।
একটি ক্রেডিট কার্ড যত বেশিদিন ধরে ব্যবহার করবেন, এর ক্রেডিট স্কোর তত বাড়তে থাকবে। ক্রেডিট কার্ড ক্লোজ করে দিলে ক্রেডিট হিস্টোরির গড় দৈর্ঘ্য কমে যায়। এই কারণে কোনো প্রয়োজন না হলে ক্রেডিট কার্ড নেয়া এবং হুট করে ক্লোজ করা থেকে বিরত থাকুন।