বর্তমানে আমরা সবাই কমবেশি নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। আর কম্পিউটার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় টাইপিং এর কাজে। তাই দ্রুত টাইপিং কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। চলুন জেনে নিই দ্রুত টাইপিং শেখার কিছু কৌশল সম্পর্কে যা আপনার টাইপিং স্পিডকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।
আপনার বসার পজিশনের উপর টাইপিং স্পিড অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনি যদি কমফোর্টেবল ভাবে বসতে না পারেন, তবে টাইপিং এর ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হবেন। তাই দ্রুত টাইপিং শেখার কৌশল অনুসরণের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে আসবে সঠিক পজিশনে বসা। আপনি যে চেয়ার বা টুলে বসবেন, উক্ত চেয়ার বা টুল আপনার কম্পিউটারের কিবোর্ড এর সাথে সঠিক পজিশনে আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
কিবোর্ড ব্যবহার করে টাইপ করার সময় অধিকাংশ ব্যক্তি সকল ফিংগার বা আঙ্গুলের ব্যবহার করেন না। কিন্তু দ্রুত টাইপিং করতে হলে সকল আঙ্গুলের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ রেস্টিং পজিশনের ক্ষেত্রে F ও J কি তে হাতের আংগুল থাকার কথা। এই পজিশনে আঙ্গুল পজিশন করার সুবিধা হলো সম্পূর্ণ কিবোর্ড এই অবস্থায় অ্যাকসেস করা বেশ সহজ হয়।
ব্যাপারটা কিছুটা অদ্ভুত হলেও দ্রুত টাইপ করার ক্ষেত্রে কিবোর্ড শর্টকাট বেশ কাজে আসতে পারে। কিছু কিবোর্ড শর্টকাট টাইপিং স্পিড এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা যোগ করে। যেমনঃ “Ctrl + Backspace” শর্টকাট ব্যবহার করে প্রতি প্রেসে একটি করে ওয়ার্ড ডিলেট করা যাবে। আবার “Shift + Home” শর্টকাট ব্যবহার করে একবার কি প্রেস করে একটি সম্পূর্ণ লাইন সিলেক্ট করা যায়। শুধুমাত্র টাইপিং হোক বা সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার, কিবোর্ড শর্টকাট শেখার কোনো বিকল্প নেই।
কিবোর্ড এর উপরও আপনার টাইপিং স্পিড অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই দ্রুত টাইপিং করতে চাইলে স্বাচ্ছন্দ্যে লেখা যায় এমন একটি কিবোর্ড বাছাই করুন। জরুরি নয় যে আপনার কিবোর্ড বেশ দামি হতে হবে, তবে এমন একটা কিবোর্ড বেছে নিন যা আপনার দ্রুত টাইপিং শেখার পথে সঙ্গী হবে।
কিবোর্ডের দিকে না তাকিয়ে টাইপিং এর অনুশীলনকে বলা হয় টাচ টাইপিং। শুরুতে এটি বেশ ঝামেলার কাজ মনে হলেও অনুশীলন করতে থাকলে কিছু সময়ের মধ্যে এই কৌশল এর মাধ্যমে টাইপিং স্পিড বাড়ানো যায়। টাচ টাইপিং এর মাধ্যমে কিবোর্ড এর কোন কি কোথায় অবস্থান করছে তা ব্রেনে সেভ হয়ে যাবে নিজ থেকেই।
10fastfingers টাইপিং অনুশীলন করার সেরা একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটটি এতোটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে এটি ব্যবহার করে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও টাইপিং প্র্যাক্টিস এর সুযোগ রয়েছে। প্রতি সেশনে একটি বাক্য দেওয়া হয় যা টাইপিং এর মাধ্যমে ওয়ার্ডস-পার-মিনিট (WPM) স্কোর ঠিক করা হয়। নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে টাইপিং অনুশীলন আপনার টাইপিং স্পিড বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে।
দ্রুত টাইপিং শেখার কৌশল হিসেবে ইতিমধ্যে আমরা কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহারের কথা জেনেছি। সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে আপনার কিবোর্ড ব্যবহার করে কম্পিউটার ব্যবহারের চেষ্টা করুন। কম্পিউটার ব্যবহারে প্রয়োজনীয় শর্টকাটসমূহ শিখুন ও যথাসম্ভব কিবোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারের চেষ্টা করুন। এতে কিবোর্ড এর কি পজিশন সম্পর্কে আপনার পরিস্কার ধারণা হয়ে যাবে ও টাইপিং স্পিড ও সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যাবে।
অনেক সময় শব্দ করে পড়লে কোনো বিষয় বেশ সহজে মুখস্ত হয়। টাইপিং এর ক্ষেত্রেও এই একই বিষয় প্রযোজ্য। দ্রুত টাইপিং শেখার লক্ষ্যে স্বশব্দে টাইপ করতে পারেন। অর্থাৎ কোনো বিষয় লেখার সময় উক্ত বিষয় মুখে বলবেন ও কিবোর্ড দ্বারা লিখবেন, এতে আপনার টাইপিংয়ে উন্নতি আসতে পারে।
টাইপিংকে অনেকটা গেমের মত ভাবতে পারেন। ধরুন এখন আপনি প্রতি মিনিটে ২০ওয়ার্ড টাইপ করতে পারেন, তাহলে আপনার পরবর্তী অবজেকটিভ হবে প্রতি মিনিটে ৩০ওয়ার্ড টাইপ করা। অর্থাৎ প্রতিবার এই গেমের জন্য নতুন একটি টার্গেট স্কোর সেট করুন এবং সে অনুসারে এগিয়ে যান।
যেকোনো বিষয়ে পারদর্শী হতে চাইলে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত টাইপিং কিভাবে করবেন বা দ্রুত টাইপিং শেখার কৌশল সম্পর্কে এই পোস্ট পড়ে আপনার টাইপিং স্পিডে রাতারাতি উন্নতি আসবেনা যদি না আপনি যথেষ্ট সময় ও পরিশ্রম প্রদান করে অনুশীলন না করেন। তাই দ্রুত টাইপিং শেখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আপনি কি জানেন আমাদের মোবাইল ও কম্পিউটারের কিবোর্ড লেআউট প্রায় একই? আমরা আমাদের স্মার্টফোন প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকি যোগাযোগের কাজে, আর ফোনের কিবোর্ড ব্যবহার করে লেখালেখির মাধ্যমেও আমাদের টাইপিং আরো ভালো হতে পারে।
বর্তমান সময়ের বিভিন্ন ডিমান্ডিং স্কিল এর পাশাপাশি দ্রুত টাইপিং করতে পারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের প্রয়োজনে আপনার টাইপিং স্পিড বাড়ানোর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করুন।