ইন্টারনেটের অজস্র ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়ানোর প্রধান সঙ্গী হলো ব্রাউজার। আর এই ব্রাউজারের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো গুগল এর ক্রোম ব্রাউজার। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ওয়েব ব্রাউজারের জনপ্রিয়তা বর্তমানে বলতে গেলে আকাশচুম্বী। কম্পিউটার থেকে শুরু করে মোবাইলসহ অন্যান্য সকল ডিভাইসে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকেন অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
ক্রোম ব্রাউজার বাজারে আসে মূলত মাইক্রোসফট এর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে টেক্কা দিতে। মুক্তির সময় শুধুমাত্র উইন্ডোজ এর জন্য আসলেও পরবর্তীতে অ্যান্ড্রয়েড, লিনাক্স, ম্যাকওএস, আইওএস, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মেও চলে আসে গুগল ক্রোম। বর্তমানে সকল ডিভাইস মিলিয়ে সবচেয়ে বৃহৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যার দখল ক্রোমের কাছে।
ক্রোম ব্রাউজারে প্রায়সই আপডেটের মাধ্যমে নতুন ফিচার নিয়ে আসে গুগল। চলুন জেনে নিই এমন কিছু সুবিধা সম্পর্কে যার জন্য সবার ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করা উচিত।
ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর বিষয়টিকে একদম সহজ করে দিয়েছে গুগল ক্রোম এর সিম্পল ইউজার ইন্টারফেস। গুগল ক্রোম এর সাধারণ ও মিনিমাল ডিজাইনের কারণে ব্যবহারকারীগণ ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো ধরনের ডিসট্রাকশন অনুভব করেন না। অন্য কিছু কিছু ব্রাউজার যেখানে ক্রিপ্টো মাইনিং বা এড দেখানোর কারাগারে পরিণত হয়েছে, সেখানে ক্রোম যেনো এক স্বস্তির নাম।
বেশিরভাগ ওয়েব ব্রাউজার বেশ দ্রুত পেজ ওপেন করতে পারলেও অধিকাংশ ব্রাউজারই অতিরিক্ত গ্রাফিক্স ও ভিডিও লোড করতে হিমশিম খায়। অন্যদিকে এসব ক্ষেত্রে ক্রোম বেশ অপটিমাইজড হওয়ার পাশাপাশি বেশ দ্রুত কাজ করে। ক্রোম এর ব্রাউজিং স্পিড আপনি অন্য যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারের চেয়ে বেশি পাবেন। সম্পুর্ন ওয়েব পেজ লোডিং এর অভিজ্ঞতা ক্রোম এর চেয়ে ভালো অন্য কোনো ওয়েব ব্রাউজারে নেই বললেই চলে।
গুগল এর অনেক ওয়েব-ভিত্তিক প্রোডাক্ট থাকার কারণে ইন্টারনেট ও সম্পর্কিত সেবাগুলো নির্মাণে তাদের কাছে সেরা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। এসব কারণে গুগল ক্রোম যাতে যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে ব্যবহারকারীকে রক্ষা করতে পারে সেই লক্ষ্যে নিয়মিত আপডেট এর মাধ্যমে বিভিন্ন সিকিউরিটি প্যাচ ও বাগ ফিক্স করা হয়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য ব্রাউজার ওয়েব এ্যাটাক ঠেকাতে ক্রোম এর তুলনায় তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা বললেই চলে। ক্রোমে যদি আপনার অনলাইন পাসওয়ার্ড সেভ রাখেন, তবে কোনো ডাটা ব্রিচে আপনার তথ্য কম্প্রোমাইজ হয়ে গিয়েছে কিনা তা সম্পর্কে ক্রোম আপনাকে জানিয়ে দিবে।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর মত ক্রোম শুধুমাত্র উইন্ডোজ কম্পিউটারের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। যার ফলে বর্তমানে সকল প্ল্যাটফর্মে ক্রোম এর জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন সকল ডিভাইসে গুগল ক্রোম ব্রাউজার চলবে এটা অনেকটা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। কম্পিউটারের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড, লিনাক্স, ম্যাক, ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেমেও ক্রোম বেশ সাবলিলভাবে ব্যবহার করা যায় কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই।
আবার গুগল ক্রোম এর Sync ফিচার এর কারণে একাধিক ডিভাইসে একই ডাটা একটি চেইনের মধ্যে থাকে, যা একাধিক ডিভাইস ব্যবহারকারী ও ডিভাইস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজে আসে। ধরুন আপনার কম্পিউটারে ক্রোম ব্রাউজারে কোনো সাইটে লগিন এর সময় পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখলেন, সেক্ষেত্রে আপনার ফোনেও উক্ত ওয়েবসাইটের লগিন ইনফো ব্যবহার করতে পারবেন।
আবার আপনার সার্চ হিস্টোরি একাধিক ওয়েবসাইটে একই থাকায় যেকোনো ওয়েবসাইট বা বুকমার্ক খোঁজা বেশ সহজ হয়। আরো রয়েছে একাধিক ডিভাইসে ট্যাব শেয়ার এর মত ফিচার। মূলত একাধিক ডিভাইসে একই গুগল একাউন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে এই জাদুময় ক্রোম Sync ফিচার কাজ করে।
ব্রাউজার হিসেবে ক্রোম কতটুকু কার্যকর তা এর মার্কেট শেয়ারের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। ৬০% এর অধিক মার্কেট শেয়ার নিয়ে সকল ইন্টারনেট ব্রাউজারের চেয়ে এগিয়ে আছে ক্রোম। ব্যবহারে সহজ হওয়ায় ও গুগল এর প্রতি মানুষের আস্থার কারণকে ক্রোম এর এই জনপ্রিয়তার পেছনের মূলশক্তি বলা চলে। ২০০৮ সালে বাজারে আসার পর একবার শীর্ষস্থান দখলের পর ক্রোম এর জায়গা আর কেউ দখল করতে পারেনি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার কারণে এর কর্তৃপক্ষ এটিকে আরও বেশি ব্যবহারবান্ধব করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ইন্টারনেট প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, যার ফলে ইন্টারনেট ভালোভাবে ব্যবহার করতে ব্রাউজার অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট থাকা প্রয়োজন। আর এই আপডেট এর ক্ষেত্রে গুগল ক্রোম যে সবার চেয়ে এগিয়ে, তা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। গুগল ক্রোম এর আপডেট আসতে দেখা যায় প্রায়সই, আবার ইন্টারনেটে কোনো নতুন প্রযুক্তি আসলেও তা সাপোর্ট এর ফিচার ক্রোমেই সবার আগে আসে।
কিছু ব্রাউজারে অ্যাপ আপডেট এর ক্ষেত্রে বা এক্সটেনশন ইন্সটল করতে ব্রাউজার অ্যাপ পুনরায় চালু হয়। তবে ক্রোম এর ক্ষেত্রে (কম্পিউটারে) সাধারণ আপডেট এর সময় আপনি টেরই পাবেন না। কেননা ক্রোম ব্রাউজার ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো সমস্যা ছাড়া আপডেট হতে পারে। অর্থাৎ আপনি ওয়েব ব্রাউজ করার সময় ক্রোম ব্রাউজার আপডেট করতে পারবেন। অবশ্য মেজর আপডেট এলে ব্রাউজার বন্ধ করে চালু করতে হয়।
ক্রোম ব্রাউজারে এক্সটেনশনস সাপোর্ট বেশ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। অধিকাংশ ব্রাউজার যেখানে শুধুমাত্র ব্রাউজিং আর কিছু বাড়তি ফিচারের মধে সীমাবদ্ধ, সেখানে ক্রোম ব্রাউজার এর এক্সটেনশনস ব্যবহার করে রীতিমতো নতুন এক জগৎ তৈরী সম্ভব। ক্রোম অ্যাপের এই এক্সটেনশনস ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজার এর অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ক্রোমের এক্সটেনশন ডিরেক্টরিতে সার্চ করলে যেকোনো প্ল্যাটফর্ম এর জন্য অগণিত ব্রাউজার এক্সটেনশন পেয়ে যাবেন। একেক ব্রাউজার অ্যাপের একেক ধরনের অনন্য ফিচার থাকলেও গুগল ক্রোম এর মত বেশ বহুমুখী কর্মসম্পন্ন কোনো ব্রাউজার নেই বলা চলে। এছাড়া গুগল এর ওয়ার্ল্ড-ক্লাস সিকিউরিটি এর কল্যাণে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায় গুগল এর ক্রোম ব্রাউজার।