বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুইটি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) হলো বিকাশ ও নগদ। উভয় সেবার অসংখ্য গ্রাহক থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহক উভয় প্ল্যাটফর্মের মধ্যে পার্থক্যসমূহ জানেন না। উভয় মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে প্রায় একই ধরনের সেবা পাওয়া যায়। এই পোস্টে আমরা উভয় প্ল্যাটফর্ম এর সেবাগুলোর পার্থক্য জানবো, যা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন কোনটি আপনার জন্য সেরা হবে।
নগদ টু নগদ সেন্ড মানি এর হিসাব বেশ সহজ। একটি নগদ একাউন্ট থেকে অন্য নগদ একাউন্টে অ্যাপ এর মাধ্যমে সেন্ড মানি করা যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অর্থাৎ বাড়তি কোনো খরচ ছাড়াই। কিন্তু নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মেন্যু *167# ডায়াল করে সেন্ড মানি করলে সেক্ষেত্রে ৫টাকা ফি প্রযোজ্য হবে।
অন্যদিকে বিকাশে সেন্ড মানি করার একাধিক সুবিধা রয়েছে যার ফলে সেন্ড মানি ফি একেক ক্ষেত্রে একেক ধরনের হয়ে থাকে। ৫টি বিকাশ প্রিয় নাম্বারে ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো বাড়তি ফি ছাড়াই সেন্ড মানি করা যায়। এরপর ওই সকল প্রিয় নম্বরে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত সেন্ড মানি এর ক্ষেত্রে ৫টাকা ও ৫০হাজার টাকার বেশি সেন্ড মানিতে ১০টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে।
প্রতি ক্যালেন্ডার মাসে এই পরিমাণ হিসেব করা হয়। এছাড়া ১০০টাকা বা তার কম সেন্ড মানি করা যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রিয় নম্বর ছাড়া অন্য বিকাশ নম্বরে ১০০.০১ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৫ টাকা চার্জ হবে। ২৫০০০ টাকার বেশি পাঠালে ১০ টাকা চার্জ প্রযোজ্য হবে। প্রতি মাসে এই লিমিট রিসিট হবে।
বিকাশ ও নগদ, উভয় সার্ভিস একই ধরনের মোবাইল রিচার্জ এর সকল সুবিধা প্রদান করে। বিকাশ ও নগদ থেকে দেশের সকল অপারেটরে রিচার্জ করা যায়। নিজের নাম্বারের পাশাপাশি অন্য যেকোনো নাম্বারে মোবাইল রিচার্জ করার সুবিধা প্রধান করে বিকাশ ও নগদ।
বিকাশ ক্যাশ আউট এর একাধিক অপশন রয়েছে। প্রথমত প্রিয় এজেন্ট নাম্বারে প্রতি মাসে ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত ১.৪৯% চার্জ কাটে। ২৫হাজার লিমিট ক্রস করলে ১.৮৫% হারে ক্যাশ আউট চার্জ প্রযোজ্য হবে।
প্রিয় এজেন্ট নাম্বার ছাড়া যেকোনো বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে ক্যাশ আউট করলে ১.৮৫% হারে চার্জ প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতি হাজারে ১৮.৫টাকা ক্যাশ আউট চার্জ কাটবে। এই ফি অ্যাপ ও ইউএসএসডি কোড *167# উভয় এর মাধ্যমে ক্যাশ আউট এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
নগদ অ্যাপে দেশের সবচেয়ে কম ক্যাশ আউট ফি উপভোগ করা যায়। নগদ অ্যাপ থেকে ক্যাশ আউট এর ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ১১.৪৮টাকা ক্যাশ আউট চার্জ কাটে। নগদ ইসলামিক অ্যাপ এর মাধ্যমে ক্যাশ আউট ফি প্রতি হাজারে ১৫টাকা। অন্যদিকে সকল নগদ একাউন্টে ইউএসএসডি কোড *167# ডায়াল করে ক্যাশ আউট করা যাবে ১৫টাকা ফি এর বিনিময়ে।
বিকাশ পেমেন্ট নেয় এমন অসংখ্য মার্চেন্টের কাছে বিকাশ দ্বারা পেমেন্ট করা যাবে। দেশের ৪৭,০০০ এর অধিক আউটলেটে বিকাশ পেমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে। দেশের অনেক সুপার স্টোর, ফার্মেসি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেস্টুরেন্ট, লাইফস্টাইল স্টোর ও ই-কমার্স সাইটে বিকাশ দ্বারা পেমেন্ট করা যাবে।
অন্যদিকে মার্চেন্ট পে এর মাধ্যমে দেশের অসংখ্য আউটলেটে নগদ পেমেন্ট করা যাবে। অর্থাৎ নগদ ও বিকাশ, উভয় এর মাধ্যমে একই ধরনের পেমেন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিকাশের কাভারেজ তুলনামূলক বেশি চোখে পড়ে। তবে এটা এলাকা ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
বিকাশ ও নগদে টাকা আনার অর্থাৎ এড মানি করার প্রায় একই ধরনের সুযোগ রয়েছে। উভয় প্ল্যাটফর্মে এজেন্টের পাশাপাশি ব্যাংক ও কার্ড থেকে এড মানি করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কার্ড বা ব্যাংক থেকে এড মানি এর ক্ষেত্রে উভয় সার্ভিস নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অফার প্রদান করে থাকে।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, পানি, ইন্টারনেট, ইত্যাদি ইউটিলিটি বিল প্রদান করা যাবে বিকাশ এর মাধ্যমে। আবার বিকাশ এর মাধ্যমে প্রতি মাসে চারটি বিল দেওয়া যাবে কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়াই। একইভাবে নগদ এর মাধ্যমেও বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট এর সুযোগ রয়েছে। তবে আপনার দরকারি সেবার বিল দেওয়া যাচ্ছে কি না সেটা আপনি চেক করে দেখতে হবে।
আইডিএলসি ফাইনান্স, ঢাখা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এর সেভিংস স্কিম এর সাহায্যে বিকাশে “Savings” ফিচার উপভোগ করা যাবে। বিকাশ এর এই সেভিং স্কিমে প্রতি মাসে অটোমেটিক টাকা কেটে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে নগদ একাউন্টে সেভিংস এর কোনো ফিচার নেই। আবার উভয় কোম্পানির সেবায়ই জমা রাখা অর্থের উপর ইন্টারেস্ট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিকাশ এর মাধ্যমে সিটি ব্যাংক এর ৩ মাস মেয়াদী লোন নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ জরুরী প্রয়োজনে লোন নেওয়ার ফিচার রয়েছে বিকাশে। অন্যদিকে নগদ এই ধরনের কোনো অফার প্রদান করেনা।
উল্লেখিত ফিচারের পাশাপাশি বিকাশে রেমিটেন্স, এডুকেশন ফি, এনজিও পেমেন্ট, ডোনেশন, সাবস্ক্রিপশন ফি কেনা, ইত্যাদি সুবিধাও রয়েছে। অন্যদিকে নগদেও ডোনেশন এর পাশাপাশি বাড়তি ফিচার নিয়মিত যোগ হচ্ছে।
নগদ ও বিকাশ, উভয় সার্ভিস প্রায় একই ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। খরচের কথা চিন্তা করলে নগদে আপনি কিছুটা কম খরচে সুবিধা পাবেন। আবার ফিচারের ক্ষেত্রে বিকাশ বেশ কিছু দিকে এগিয়ে থাকবে। এখন কোন সেবাটি আপনার জন্য অধিক উপযোগী হবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হবে যদি উভয় সেবায় একাউন্ট খোলেন। তাহলে সুবিধা অনুযায়ী যখন যেটা দরকার হবে সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। উল্লেখ্য, বিকাশের চেয়ে নগদ একাউন্ট খোলা অধিক সহজ।