নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে ক্যাপচা (CAPTCHA) কোনো নতুন শব্দ নয়। আজকাল প্রায় সব ওয়েবসাইটেই ক্যাপচা এর দেখা মিলে। আজ আমরা এই ক্যাপচা এবং এটির কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
CAPTCHA কয়েকটি ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যার সম্পূর্ণ মানে দাঁড়ায় – Completely Automated Public Turing test to tell Computers and Humans Apart। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ এবং কম্পিউটার এর মধ্যে পার্থক্য যাচাইকরণের প্রক্রিয়া হল ক্যাপচা।
ক্যাপচা এর মাধ্যমে একটি সিস্টেম এটি নির্ধারণ করে যে কোনো প্রক্রিয়ায় মানুষ সংযুক্ত আছে, নাকি কোনো স্প্যাম রোবট এর মাধ্যমে কাজটি করানো হচ্ছে। ক্যাপচা প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা, লেখা কিংবা এমন কিছু তথ্য দেখে দেখে ইনপুট করতে বলা হয় যা শুধুমাত্র মানুষের দ্বারাই করা সম্ভব। সাধারণত, কোনো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম ক্যাপচা পূরণ করতে পারে না।
ক্যাপচা এর আবিস্কার হয়েছিলো মূলত স্প্যামি সফটওয়্যার দ্বারা পোস্টকৃত কমেন্ট ঠেকাতে। ক্যাপচা এর সর্বাধিক প্রচলিত রূপ হল কিছু বিকৃত অক্ষর ও সংখ্যাযুক্ত একটি চিত্র। এছাড়াও কোনো একটি ছবি থেকে নির্দিষ্ট একটি বিষয়যুক্ত সেকশনগুলো আলাদা করতে হয়, এমন ক্যাপচা এর ও ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে।
ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার মূলত কোডিং ভাষা ব্যবহার করে চলে। কম্পিউটারগুলো মানুষের ভাষা বুঝতে পারেনা, কারণ মানব ভাষা বিস্ময়কর এবং জটিল নিয়ম এর সমন্বয়ে তৈরী।
ক্যাপচা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয় যা ব্যবহারকারী রোবট কিনা তা যাচাই করে। ক্যাপচা শব্দটি প্রথম ২০০০ সালে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছিলেন। অনলাইন পোল যাচাই করার জন্য প্রথম ক্যাপচা ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে, SlashDot একটি সমীক্ষা তৈরি করেছিল যা ভিজিটরদের কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য সেরা প্রোগ্রামযুক্ত স্নাতক স্কুলটি বেছে নিতে বলতো। কার্নেগি মেলন এবং এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলে বারবার ভোট দেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম অর্থাৎ রোবট তৈরি করেছিল।
এই বিদ্যালয়গুলো উক্ত সমীক্ষাতে হাজার হাজার ভোট পায়, যেখানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পায় মাত্র কয়েকশো ভোট। ব্যবহারকারীরা যাতে ভোটদান ব্যবস্থার সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য ক্যাপচা কার্যকর করা হয়েছিল।
ক্যাপচা এর সর্বাধিক ব্যবহার হয় ইয়াহু মেইল বা জিমেইল এর মত সাইটগুলোতে, যেখানে লোকেরা বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারে। এসব সাইটগুলোতে বটগুলোর অধিকহারে স্প্যাম ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরীর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় ক্যাপচা।
টিকেটমাস্টার এর মতো টিকেট বিক্রেতা ওয়েবসাইটগুলোও বড় ইভেন্টের জন্য টিকেট দালালদের বেশি টিকেট কেনা থেকে আটকাতে ক্যাপচা ব্যবহার করে। এটি বৈধ গ্রাহকদের সুষ্ঠুভাবে টিকেট কেনার অনুমতি দেয় এবং হাজার হাজার টিকেটের অর্ডার দেওয়া থেকে রোবটগুলোকে রুখে দেয়।
এছাড়াও ওয়েবপেজ ও ব্লগে মেসেজ বোর্ড বা কন্টাক্ট ফর্মগুলোতে আসা স্প্যামি মেসেজ এবং কমেন্ট প্রতিরোধ করতে ক্যাপচ্যা ব্যবহার করা হয়। এটি সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে না, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজ পোস্ট করা থেকে রোবটগুলিকে প্রতিরোধ করে।
দুর্ভাগ্যক্রমে, প্রযুক্তি এবং ক্ষতিকর হ্যাকাররা আরো উন্নত হওয়ার সাথে সাথে তাদের স্ক্যামিং এর কৌশলগুলোও উন্নত হচ্ছে। যদিও ক্যাপচা অনেকটাই নিরাপদ, কিন্তু বর্তমানে সাইবার অপরাধীরা তাদের স্ক্যামগুলোকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তাদের মিথ্যা বা প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটগুলোতেও ক্যাপচা অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করেছে।
ওয়েবসাইট এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখতে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয় ক্যাপচা। ক্যাপচা যেসব ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত –
উপরে বর্ণিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রেই ক্যাপচা ব্যবহৃত হয়।